ফুটপাত থেকে সরিয়ে হকারদের খোলা মাঠে পুনর্বাসন
নিউজ-ডেস্ক, আজকের বাংলাদেশ;
সিলেট নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। ফলে পথচারীরা পড়তেন দুর্ভোগে আর নগরজুড়ে লেগে থাকত যানজট। নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছিল ফুটপাত ও সড়ক বেদখল।
অবশেষে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসা হকারদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকায় ৪ একরের খোলা মাঠে অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করে হকারদের ব্যবসার জায়গা করে দেয়া হয়েছে।
Table of Contents
এদিকে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর পর সোমবার থেকেই নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে অভিযানে নামে সিসিক। মঙ্গলবারও নগরের কয়েকটি এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
সিসিকের পুনর্বাসন উদ্যোগ ও অভিযানের ফলে দুদিন ধরেই অনেকটা হকারমুক্ত অবস্থায় আছে ফুটপাত ও সড়ক। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
জানা যায়, গত জুলাইয়ে সিটি নির্বাচনের সময় হকারদের পুনর্বাসন ও সড়ক থেকে উচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি দেন। মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে এক মাসের মধ্যে নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসা হকারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তবে ওই সময়ের মধ্যে উচ্ছেদে ব্যর্থ হলেও অবশেষে সফল হয়েছেন তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, হকারদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পাশের লালদীঘির পাড় এলাকায় অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মাটি ভরাট, ইটের রাস্তা, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থাসহ সব কাজ শেষে রোববার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানটি হকারদের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
মার্কেটটিতে প্রায় আড়াই হাজার হকার একসঙ্গে বসে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন বলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছোট ব্যবসা করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করেন। তারা চুরি-ডাকাতি করেন না। হকাররা শুধু হকার নন, তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তারা আমাদের ভাই, আমাদের পরিজন। তাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাই উচ্ছেদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন হকারদের পুনর্বাসনও করছে।’
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার হকার অস্থায়ী মার্কেটে পুনর্বাসিত হয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে অন্যান্য হকারও পুনর্বাসিত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাজলু বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব হকারকে স্বউদ্যোগে নির্দিষ্ট স্থানে পুনর্বাসিত হওয়ার অনুরোধ করেছেন মেয়র। এরপর বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি কোনো হকার রাস্তা কিংবা ফুটপাতে বসেন, তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে, নগরের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর পর মঙ্গলবার দুপুরে ফুটপাত দখলমুক্ত ও যানজট নিরসন করতে অভিযানে নামে সিসিক।
এ সময় সিসিকের পক্ষ থেকে সতর্ক করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের নগরভবন লাগোয়া লালদিঘির পাড়ের নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য বলা হয়। নির্দেশ অমান্য করায় কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরের প্রধানতম বাণিজ্যিক এলাকা বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকা ঘুরে সড়ক ও ফুটপাতে কোনো হকার দেখা যায়নি। যদিও গত শনিবারও এসব এলাকার পুরো ফুটপাত ও সড়কের অনেকাংশজুড়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা ছিলেন হকাররা।
আগে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার সড়কে জুতা বিক্রি করতেন শরিফ আহমদ। এখন লালদিঘির পাড়ের অস্থায়ী মার্কেটে পুনর্বাসিত হয়েছেন তিনি।
শরিফ বলেন, ‘এখানে বসতে আমাদের আপত্তি নেই। বরং বিনা ভাড়ায় নির্দিষ্ট একটি জায়গা পেয়ে ভালোই লাগছে। কিন্তু ক্রেতারা ভেতরে আসতে চান না। তারা সড়কের পাশ থেকেই পণ্য কিনে নিয়ে যেতে চান। এখানে ক্রেতারা না আসলে তো আমরা বসে থেকে কোনো লাভ হবে না। তাই এই মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে।’
সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক, সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নগরজুড়ে এতদিন হকারদের রাজত্ব ছিল। তাদের কারণ সকড় ও ফুটপাত দিয়ে চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। দেরিতে হলেও সিটি করপোরেশন তাদের পুনর্বাসন ও উচ্ছেদ শুরু করেছে। এটি ভালো উদ্যোগ।’
সড়ক দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগেও সাবেক মেয়র নগরের হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগ শুরুর পর কয়েকদিন সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত ছিল। কিন্তু কিছুদিন পর আবার সবকিছু আগের মতো হয়ে যায়। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে নেয় তারা। তাই এ ব্যাপারে নিয়মিত অভিযান ও নজরদারি রাখা প্রয়োজন।’


কোন মন্তব্য নেই