| |

প্রতি মিনিটেই বাড়ছে পানি, প্লাবিত হচ্ছে সিলেটের নতুন নতুন এলাকা

নিউজ-ডেস্ক, আজকের বাংলাদেশ;
পানিতে ভাসছে সিলেট, ১০ লাখ মানুষ জলবন্দি। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সিলেটের বিস্তীর্ণ জনপদ।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। চলতি মাসে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যার কবলে পড়া সিলেটে এরই মধ্যে দশ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বন্যা বিস্তৃত হয়েছে সব উপজেলায়। ডুবন্ত ঘরবাড়ি ফেলে উঁচু সড়ক ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন অনেক পরিবার। সিলেট মহানগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার প্রায় দেড় হাজার গ্রাম এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
Table of Contents

সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। স্রোতে ভেসে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জেলার দুর্গত সব মানুষের কাছে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ। খোয়াই ছাড়া সব নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও ঢলে সড়ক ও বাড়িঘর দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলার ১০১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকার উঁচুস্থানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সিলেট : 

ঈদুল আজহার ভোরে শুরু হওয়া বৃষ্টি বুধবার রাতেও অব্যাহত ছিল। সেই সাথে অব্যাহত আছে ভারতীয় সীমান্ত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল। বন্যায় তলিয়ে গেছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক। সবগুলো নদীর পানি তিন দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরে। আবার অনেকে চাইলেও নৌকার অভাবে যেতে পারছেন না আশ্রয়কেন্দ্রে। পানিবন্দি মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন খাবারের অভাবে। সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ। তবে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে প্রায় ১০দিন স্থায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় আট লাখ মানুষ। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি ও গ্রামীণ সড়ক। সেই জের কাটতে না কাটতে দ্বিতীয় দফায় বন্যা আক্রান্ত হলো সিলেট।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে বর্তমানে ৮১৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ৩৪ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য নগদ ৪০ লাখ টাকার চাহিদা রয়েছে। আর মহানগরে ১ কোটি ২০ লাখ নগদ অর্থের চাহিদা রয়েছে।

গতকাল সিলেটে বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। তিনি জানান, সিলেট বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকার অন্যতম। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্গত মানুষের পাশে আছে সরকার।

মৌলভীবাজার :

দুই দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। হাওরের পানিতে বড়লেখা উপজেলার ৪টি, জুড়ি উপজেলার ৩টি, কুলাউড়া উপজেলার ৩টি, সদর উপজেলার ৪টি এবং রাজনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, সদর উপজেলায় মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত দুদিনের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার হাওরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পুরনো ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এতে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বড়লেখায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

সুনামগঞ্জ : 

সুনামগঞ্জে গত মঙ্গলবার রাতে সুরমা নদীর পানি কিছু কমলেও বুধবার সকাল থেকে হাওর এলাকায় পানি বাড়ছে। এদিন সকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার কমলেও বিকালে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ও ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃষ্টি অব্যাহত আছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত কয়েক লাখ মানুষ। জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, বুধবার বিকাল পর্যন্ত জেলার দুটি পৌরসভাসহ ৭৮ ইউনিয়নের ১০১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত লোক প্রায় ৭০ হাজার। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ছাতক উপজেলায় বেশি।

সুনামগঞ্জ শহরের নদীতীরের নবীনগর, ষোলঘর, উকিলপাড়া, পশ্চিমবাজার, আরপিন নগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর এলাকায় কিছু পানি হ্রাস পেলেও রাস্তাঘাট পানির নিচে রয়েছে। অনেক বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি রয়েছে। তবে হাওরের দিকের শহরের হাছননগর, নতুনপাড়া, হাজীপাড়া, কালীপুর এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার পানিতে ছাতক-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক প্লাবিত হওয়ায় এসব সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

হবিগঞ্জ : 

গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। এ পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে ৪টি ইউনিয়নের বেশ কটি গ্রামের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে বলে উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে। এ পর্যন্ত গালিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ দাস অনু।

কোন মন্তব্য নেই